November 2019

-----★---------★--------★---------★----
দ্যা আলকেমিস্ট



পাওলো কোয়েলহো নিঃসন্দেহে একবিংশ শতাব্দীর  একজন গুণী লেখক। অবশ্যই তাঁর লেখনীর সৃজনশীলতা তৈরি হয়েছে গত ৫০ বছরে, কিন্তু তাঁর জ্ঞান এবং যুক্তিবাদীতা নিঃসন্দেহে বর্তমানে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। বর্তমানে মানুষ ভোগবাদী এবং প্রগতিশীল জীবনযাত্রার জেলে আবদ্ধ। মানুষ ভুলে যেতে বসেছে যে তাদের একটি আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে এবং তারা চাইলেই তাদের আত্মা থেকে দূরে সরে যেতে পারবে না। এবং আমরা জেনে হোক না জেনে হোক, কেন যেন কৃত্রিমতার মাঝে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে বেশি ভালোবেসে আসছি।অগাধ জ্ঞানের অধিকারী পাওলো আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ভান্ডার যা কিনা আমাদের সকলের সামনে “দ্যা আলকেমিস্ট” নামে পরিচিত। এই বইটি জীবন দর্শনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়কে তুলে ধরেছে। তাঁর জ্ঞান এবং তাঁর প্রবল ইতিবাচক মানসিক চিন্তাধারা কিছু সুন্দর বিষয় আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। যা প্রমাণ করেছে, বই শুধু চিত্তবিনোদনের জন্য নয়, বরং জীবন দর্শন এবং জীবন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখে।



সাধারণত আমরা বই পড়ে থাকি সময় কাটানোর জন্য। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বই পড়ার বিষয়টি জ্ঞান অর্জন করার জন্য হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে একটি বই, যা কিনা জীবন দর্শন এবং জীবনকে আরো বেশি সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে সে বইটিকে নিঃসন্দেহে একটি জ্ঞানভাণ্ডার ছাড়া আর অন্য কোন নামে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। আজকে আমি তোমাদের জানাবো পাওলোর বিখ্যাত বই “দ্যা আলকেমিস্ট” বইয়ের কিছু জীবন দর্শন বা শিক্ষা যা তোমার জীবনকে আরও উন্নত করতে এবং পূর্ণাঙ্গ করতে সহায়তা করবে।


ভয় হচ্ছে তোমার জীবনের অন্যতম বাধা অন্য যেকোন দর্শনীয় বাধার চেয়েও ভয়ংকর বাধা হচ্ছে ভয়

ভয়ের কষ্ট নিজের সাথে লড়াই করা যেকোন কষ্টের চেয়ে ভয়ংকর। জীবনে কষ্ট ছাড়া কোনো সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। সফলতাকে না খুঁজলে সফলতা কখনো ধরা দেবে না। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে, ভয়কে দূরে সরিয়ে সফলতা খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়ো।



অজানা যেকোনো বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে ভয় কাজ করে। কিন্তু একই সাথে নতুন যে কোন বিষয় স্বাগতম জানানোর ব্যাপারটি আমাদের মাঝে উৎফুল্লতার সাথে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। বিশ্বাস রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে যেকোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া একই সাথে যে কোন নতুন বিষয় জানার ব্যাপারটি অনেক ভালোভাবেই কাজ করে।




তাই অজানা কোন কিছু নিয়ে ভয় না পেয়ে নতুনকে বরণ করে নাও, স্বাগতম জানাও। একই সাথে ভয়কে জয় করে প্রতিকূলতা পেরিয়ে সফলতা অর্জন করবে করবে এমন একটি ইচ্ছা নিজের মাঝে পোষণ করো।

সত্যের জয় সব সময় হয়


তুমি যদি যেকোন পরিস্থিতিতে সত্যকে সবসময় গুরুত্ব দাও, তাহলে কেউ যদি তোমাকে ভুল বুঝে থাকে, তবুও সে কোন না কোন সময় তোমার সত্যটাকে অনুধাবন করে তোমার কাছে আসবে। ঠিক একই রকমভাবে তুমি যদি সাময়িকভাবে খুব ছোট এবং ক্ষণস্থায়ী আলোক রশ্মির মত মিথ্যাটাকে বেশি গুরুত্ব দাও, তাহলে জেনে রেখো কেউ যদি তোমাকে ভুল বুঝে থাকে, সে তোমাকে সাময়িক সময়ের জন্য সঠিক তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।



সত্যকে কখনোই নতুন করে ভিন্ন রূপ দেয়া সম্ভব নয়। সত্য সব সময় অনেক বেশি মূল্যবান এবং শক্তিশালী। আর তাই যখনই তুমি সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য সন্ধান করবে, সব সময় সত্যটাকেই বেশি গুরুত্ব দেবে। সেই সাথে অপরের সাথে সব সময় সত্যবাদী থাকায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। কারণ, একমাত্র সত্যই তোমাকে যে কোন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে একমাত্র কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। আর পরিস্থিতি যতই নেতিবাচক থাকুক, মিথ্যার আশ্রয় নেবে না।

একঘেয়েমি বিষয়গুলো সরিয়ে ফেলো



যখন কারো জীবনের প্রতিটি দিন একই রকম থাকে, তার মানে সে ভুলে গেছে যে, তার জীবনে প্রতিদিনই একটি চমৎকার নতুন বিষয় হচ্ছে আর তা হচ্ছে প্রতিদিনই নতুন সূর্য উঠবে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হচ্ছে।



অর্থাৎ জীবনটাকে কোনোভাবেই একঘেয়ে করে ফেলা যাবে না। আমাদের আশেপাশে প্রতিটি দিনই নিত্য নতুন সম্ভাবনা, নিত্যনতুন অনেক কিছু ঘটছে প্রতিনিয়তই। মনে রাখতে হবে একঘেয়েমি হচ্ছে অনেকটা নীরব ঘাতকের মতো। তুমি যখন নিজের জীবনে কোন আনন্দ খুঁজে পাবে না বা নতুন কিছু করার মতো খুঁজে পাবে না, তার মানে তুমি তোমার জীবন থেকে সকল ধরনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছো।




আর কোন কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা মানে, নতুন কোন কিছু নিয়ে সামনে এগোবার মত কোন প্রাণশক্তি তোমার মাঝে আর অবশিষ্ট নেই। বিষয়টি একটু গভীরভাবে ভাবতে গেলে অনেক ভয়ঙ্কর যে, নতুন কিছু করবার মতো যখন প্রাণশক্তি আমাদের মাঝে অবশিষ্ট থাকে না, তখন কিন্তু নতুন কোন সফলতাও আমরা দেখতে পাই না। আর তাই জীবন থেকে একঘেয়ে ব্যাপারগুলোকে সরিয়ে ফেলো, পরিবর্তনকে স্বাগতম জানাও, নিত্যনতুন কাজের মাধ্যমে নিজের আগ্রহকে ধরে রাখার চেষ্টা করো।

বর্তমানকে আলিঙ্গন কর


অতীতে না, ভবিষ্যতে না, সব সময় বাঁচার চেষ্টা করো বর্তমানে। তুমি যদি সব সময় তোমার বর্তমান সময়ের দিকে মনোযোগী হও তাহলে নিঃসন্দেহে তুমি অনেক সুখী একজন মানুষ হবে।



মনে রাখতে হবে, তোমার অস্তিত্ব বর্তমানে এবং এখনই। অর্থাৎ নিজের বর্তমানকে যদি গুরুত্ব না দাও, তাহলে একটি উজ্জ্বল আগামীকাল তোমার সামনে ক্ষীণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, অতীত বা ভবিষ্যৎ কোনটাই তোমাকে রাতারাতি কোন ফলাফল এনে দেবে না, তারপর তুমি যদি ভবিষ্যৎ নিয়েই পড়ে থাকো তাহলে তোমার আগামীকালটি সুন্দর হবে না।



মনে রাখতে হবে, যদি আগামীকালকে সুন্দর করতে চাও তাহলে বর্তমানেকে গুরুত্ব দিতে হবে। অতীত নিয়ে পড়ে থাকার কোন মানে নেই, কেননা অতীতের চিন্তা তোমাকে দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কিছুই দেবে না। অপরদিকে ভবিষ্যত কী হবে তা নিয়ে আকাশ কুসুম কল্পনা তোমাকে বাস্তব পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে। আর তাই বর্তমানকে দাও বেশি গুরুত্ব ।

সফলতার ঢেউয়ের মতো প্রভাব রয়েছে

যখন তুমি সংগ্রাম করবে, নিজেকে আরও বেশি উন্নত করবে তখন দেখবে তোমার আশেপাশের সব কিছুই আরো বেশি উন্নত এবং মনমত মনে হচ্ছে। অর্থাৎ তুমি যখন নিজের প্রচেষ্টায় নিজেকে সফলতার শীর্ষস্থানে দেখতে চাইবে তখন খেয়াল করবে তোমার আশেপাশের প্রতিটি জিনিসকে তুমি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছো।




একই সাথে তোমার সব কিছুই আগের চেয়ে অনেক ভালো লাগছে, অর্থাৎ আমাদের সফল হবার ইচ্ছা শুধু যে আমাদেরকে উন্নত জীবন দান করে তাই নয়, বরং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও উন্নত করে। যাতে করে আমরা আমাদের চারপাশের সব কিছুকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারি।


মনে রাখবে তোমার পরিবর্তন হচ্ছে তোমার নিজেরই বিবর্তন। অর্থাৎ, তুমি যখন নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইবে তখন আশেপাশের জিনিসগুলোকেও তুমি পরিবর্তিতভাবে গ্রহণ করতে শিখবে। আর তাই নিজেকে নিত্যনতুন কাজের সাথে খাপ খাইয়ে নাও। একই সাথে নিজেকে সফল করার জন্য উন্নত   স্বপ্ন দেখো। দেখবে আশেপাশের সব কিছুই তোমার সফলতার সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।



স্পষ্টবাদী হও


যখনই আমরা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই, তখনই আমরা এমন কিছু পরিস্থিতি বা সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হই, যা পূর্বে কখনো ভাবিনি। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের পরিস্থিতি আমাদের সামনে আসতে পারে। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে, তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেরি করলে বা অতিরিক্ত ভাবলে তাতে করে যে তোমার সিদ্ধান্ত অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে, তা নয় বরং যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপাতদৃষ্টিতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।



কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্পষ্টবাদী মনোভাব যদি তোমাকে সাপোর্ট করে, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে সে  সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলা উচিত। অর্থাৎ যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তোমারস স্পষ্টবাদী মনোভাবের পাশাপাশি তোমার বিবেককেও জাগ্রত করো। নিজেকে জিজ্ঞেস করো, যে সিদ্ধান্তটি নিতে তুমি যাচ্ছো তা আদৌ ফলপ্রসূ কিনা। আর যদি সেটা ফলপ্রসূ না হয়, তবে সে ধরনের সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে চলে সাহসিকতার সাথে সামনে এগিয়ে যাও।

তোমার কল্পনাকে মুক্ত করে দাও


কল্পনাশক্তিকে কোনভাবেই আবদ্ধ না রেখে বরং তোমার কল্পনাশক্তিকে মুক্ত করে দাও। আরো বেশি স্বাধীনভাবে কল্পনা করবার জন্য তুমি যখন স্বাধীনভাবে তোমার ভবিষ্যৎ বা আগামী নিয়ে কল্পনা করতে পারবে, তখন তুমি অনেক সফল এবং সুখী জীবনযাপন করতে পারবে।



আমাদের অন্যতম সমস্যা হল আমরা কল্পনা করতে গিয়েও কিপটেমি করে বসি। ভাবি, “এটা কল্পনা করে আমাদের কী লাভ? এরকম তো আর হবে না!” কিন্তু তুমি যদি স্বপ্ন বড় না দেখো, তাহলে বড় কিছু কিন্তু অর্জন করতে পারবে না। তোমার কল্পনাকে যদি তুমি স্বাধীন করে না দাও, তাহলে বড় কিছু অর্জন করা তোমার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আর তাই তোমার কল্পনা শক্তিকে মুক্ত করে দাও। নিজের মত করে কল্পনা করো। তাহলে সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য তোমার ভেতরে আকাঙ্ক্ষার জন্ম হবে।



ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যহত রাখো


জীবনে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র হলো সাতবার পড়ে গিয়েও আটবারের বেলায় উঠে দাঁড়াতে হবে।



কখন আত্মসমর্পন করো না, কখনো হেরে যেও না। তোমার বিশ্বাসই তোমার সফলতা নির্ধারণ করবে। আর তাই যত সমস্যায়ই পড়ো না কেন, যত বিপদই সামনে থাকুক না কেন, যদি তা তোমার সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি নিজের ভেতর রাখতে হবে।



মনে রেখো, ঘরে বসে থাকলে কোন সফলতা তোমার সামনে আসবে না। সেজন্য তোমাকে লড়াই করতে হবে। তুমি বারবার পড়ে যাবে কিন্তু তোমাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। জীবনে যদি সফল হতে চাও নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। এই বিশ্বাস রাখো, যত সমস্যাই হোক তুমি ঘুরে দাঁড়াবেই। এটা আশা করোনা যে অন্য কেউ সব সময় তোমার উপর বিশ্বাস রাখবে। নিজের বিশ্বাস তোমাকে নিজের উপরই রাখতে হবে।

নিজের পথ অনুসরণ কর


নিজের সম্পর্কে যদি তোমার নিজের কোনো স্পষ্ট ধারণা না থাকে, কোন পথ যদি তোমার নিজের তৈরি না থাকে, তাহলে অন্যরা কতক্ষণ তোমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারবে? আমাদের সবারই কিছু ভ্রান্ত বিষয়ে থাকে, অপরের ব্যাপারে অগাধ জ্ঞান থাকে, অপরের রাস্তা সম্পর্কে আমরা খুব বেশি অবগত থাকি। কিন্তু নিজে আসলে কোন পথে হাঁটতে চাই সেই ব্যাপারে অবগত হতে পারি না।



অন্যেরা তাদের অভিজ্ঞতা তোমার সাথে শেয়ার করবে। অবশ্যই আরেকজনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা ভালো। তাতে করে তোমার নিজের পথকে তুমি কীভাবে আরো মসৃণভাবে চলতে পারবে সে ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। কিন্তু মনে রেখো তোমাকে সবসময় নিজের পথেই হাঁটতে হবে। অন্যের বিশ্বাস বা অন্যের স্বপ্নকে পুঁজি করে তুমি বেশি দূর এগোতে পারবে না।



অন্যের রাস্তায় নিজের শক্তি দিতে গেলে বারে বারে তুমি শক্তিশূন্য হয়ে যাবে। আর তাই অপরের পথের চেয়ে নিজের পথকে ভালোভাবে অনুসরণ করা শেখো। সেই সাথে নিজেকে জানার চেষ্টা কর, তুমি আসলে কোন পথে হাঁটতে চাও, সেই পথকে কীভাবে আরো মসৃণ করা যেতে পারে সে ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করো।



নিজের পথে হাঁটতে গেলে অনেক সময়ই তোমার দৃষ্টিভঙ্গিকে অপরের সামনে সমালোচনার মাধ্যমে সঠিক প্রমাণ করতে হবে। আর তাই নিজের পথটিকে ভালোভাবে চেনার চেষ্টা করো এবং নিজের পথে হাঁটার চেষ্টা করো।



শুধু কথা নয় বরং কাজ শুরু করবে এমন কেউ হওয়ার চেষ্টা করো


অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নতুন কিছু শেখার অন্যতম মাধ্যম হল চেষ্টা করা। আমাদের মাঝে এরকম অনেকেই আছে, যারা শুধু বলেই যায়, তারা এটা করবে, ওটা করবে, কিন্তু শুরু আর করতে পারেনা। তুমি নিজে থেকে নিজেকে তাদের দলভুক্ত করো না। বরং তুমি যে কোন কাজ করার কথা বললে সেটা করে দেখানোর চেষ্টা করো।



অথবা যে কোন উদ্যোগ নিজে নেওয়ার চেষ্টা করো। ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা তোমাকে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করে দেবে। মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে তার অভিজ্ঞতা। তুমি হয়তো চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে পারো, কিন্তু বিশ্বাস রেখো তোমার এই ব্যর্থতা একপ্রকার সফলতা। কারণ, যে চেষ্টা করেনি তার ভাগ্যে কিছুই জোটেনি, কিন্তু তুমি অভিজ্ঞতাকে তোমার অর্জনের খাতায় লিখে রাখতে পারবে।



এই লেখাটি নেয়া হয়েছে রবি ১০ মিনিট স্কুল ব্লগ থেকে।

-----★---------★--------★---------★----
ঘুর্নিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে করণীয় :

১. দূর্যোগের সময় কোন এলাকার লোক কোন আশ্রয়ে যাবে, গরু, ছাগল, মহিষ কোথায় থাকবে তা আগে ঠিক করে রাখুন এবং জায়গা চিনে রাখুন।

২. নিজের কাছে ব্যাটারীচালিত রেডিও রাখুন বা মোবাইলে রেডিও শুনুন। নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করুন।

৩. সম্ভব হলে বাড়িতে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ব্যান্ডেজ, তুলা, ডেটল প্রভৃতি) রাখুন।

৪. জলোচ্ছ্বাসের পানির প্রকোপ থেকে রক্ষায় নানারকম শস্যের বীজ উত্তমভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

৫. ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাবার সময় কি কি জরুরি জিনিস সঙ্গে নেয়া যাবে এবং কি কি জিনিস মাটিতে পুঁতে রাখা হবে তা ঠিক করে সে অনুসারে প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

৬. আর্থিক সামর্থ থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত করুন। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বে এই পাকা গর্তের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।

৭. ডায়ারিয়া মহামারীর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুদের ডায়ারিয়া হলে কিভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে পরিবারের সকলকে প্রশিক্ষণ দিন।

৮. ঘূর্ণিঝড়ের মাসগুলোতে বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট জাতীয় শুকনো খাবার রাখুন।

৯. নোংরা পানি কিভাবে ফিটকারি বা ফিল্টার দ্বারা খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন।

১০. বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করুন। মাটির বড় হাঁড়িতে বা ড্রামে পানি রেখে তার মুখ ভালভাবে আটকিয়ে রাখতে হবে যাতে পোকা-মাকড়,ময়লা- আবর্জনা ঢুকতে না পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাবার পর দুর্যোগকালে করণীয় :

১. আপনার ঘরগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করুন, আরও মজবুত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যেমন মাটিতে খুঁটি পুঁতে দড়ি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন অংশ বাঁধা।

২. দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

৩. বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্র বাড়ির মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধাদের আগে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত হোন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশের পরে সময় নষ্ট না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যান।

৪. বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার সময় অবশ্যই আগুন নিভিয়ে যাবেন।

৫. আপনার অতি প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন- ডাল, চাল, দিয়াশলাই, শুকনো কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ঔষধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধন পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।

৬. আপনার গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচুস্থানে রাখুন। কোন অবস্থায়ই গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোন উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন, বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।

৭. আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব না হলে শক্ত গাছের সাথে কয়েক গোছা লম্বা মোটা শক্ত রশি বেঁধে রাখুন। রশি ধরে অথবা রশির সাথে নিজেকে বেঁধে রাখুন যাতে প্রবল ঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিতে না পারে।

৮. আশ্রয় নেয়ার জন্য নির্ধারিত বাড়ির আশেপাশে গাছের ডালপালা আসন্ন ঝড়ের পূর্বেই কেটে রাখুন, যাতে ঝড়ে গাছগুলো ভেঙে বা উপড়িয়ে না যায়।

৯. রেডিওতে আবহাওয়া আপডেট নিয়মিত শুনুন।

১০. দলিলপত্র ও টাকা-পয়সা পলিথিনে মুড়ে নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন অথবা সুনির্দিষ্ট স্থানে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখুন।

১১. টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালভাবে আটকে রাখতে হবে যাতে ময়লা বা লবনাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে।

দূর্যোগ পরবর্তী করণীয় :

১. রাস্তা-ঘাটের উপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।

২. আশ্রয়কেন্দ্র হতে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।

৩. অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করুন।

৪. ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে শুধু এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে যেন অন্যকে সাহায্য করে সে বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

৫. দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধারের কাজ শুরু করুন।

৬. ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার সম্ভাবনা থাকে।

৭. পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় দোয়া পড়ুন :

১- আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহি, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহি’ (তিরমিজি, মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট এ বাতাসের ভালো দিক, এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা এবং যে উদ্দেশ্যে তা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার উত্তম দিকটি প্রার্থনা করছি। এবং তোমার নিকট এর খারাপ দিক হতে, এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার মন্দ দিক হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

২- সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি। (মুয়াত্তা)
অর্থ :পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা  সভয়ে পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা।

৩- আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগজাবিকা ওয়া লা তুলহিকনা বিআ’জাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা। (তিরমিজি)
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! তুমি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও।

৪- আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা। (বুখারি)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।

৫- আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা- ওয়া খাইরা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি। (তিরমিজি)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।
©



my info

{facebook#www.facebook.com/raju.ahammed.16} {twitter#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {google-plus#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {pinterest#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {youtube#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL} {instagram#YOUR_SOCIAL_PROFILE_URL}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget